যুদ্ধ সমস্যার সমাধান করতে পারে না: পুতিনকে মোদী

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আমন্ত্রণে মস্কোয় সফর করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মঙ্গলবার পুতিনের সঙ্গে রাজধানী মস্কোতে বৈঠক করেন তিনি। সে সময় মোদী পুতিনকে বলেন, যুদ্ধ সমস্যার সমাধান করতে পারবে না এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। খবর এএফপির।

পুতিনের পাশে বসে হিন্দি ভাষায় দেওয়া এক বিবৃতিতে মোদী বলেন, একজন বন্ধু হিসেবে আমি বলেছি যে, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মোদী বলেন, যখন নিষ্পাপ শিশুদের হত্যা করা হয়। যখন কেউ শিশুদের হত্যা করতে দেখেন তখন প্রচণ্ড আঘাত লাগে এবং এটা সহ্য করার মতো নয়।

মোদী জানিয়েছেন, মস্কোতে তার এই সফরে তিনি ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান সম্পর্কে পুতিনের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, একজন সত্যিকারের বন্ধু হিসেবে আমরা একসঙ্গে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেছি।

তিনি আরও বলেন, আমি এ বিষয়ে খুব খুশি যে ইউক্রেন ইস্যুতে আমরা দুজনই খোলা মনে এবং বিস্তারিত ভাবে নিজেদের চিন্তা-ভাবনা প্রকাশ করেছি।

স্থানীয় সময় সোমবার মস্কোয় পা রাখেন মোদী। সে সময় তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান রুশ প্রেসিডেন্ট। এর মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেই ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে একযোগে হামলা চালায় রাশিয়া। এতে প্রায় ৪১ জন নিহত হয়েছে। রাজধানী কিয়েভের একটি শিশু হাসপাতালেও হামলা চালানো হয়।

ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন দেশের সরকার এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। মোদী বলেন, আমি জানি যুদ্ধ সমস্যার সমস্যার সমাধান করতে পারে না। বোমা হামলা, বন্দুক হামলা বা বুলেটের আঘাতের মধ্যে সমাধান বা শান্তি আলোচনা সফল হতে পারে না।

এদিকে মোদীর এই সফরকে ভালোভাবে গ্রহণ করেননি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তার এই দুদিনের সফরকে হতাশাজনক ও শান্তি প্রচেষ্টায় ধাক্কা বলেও উল্লেখ করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা এক বার্তায় জেলেনস্কি বলেন, বিশ্বের একজন শীর্ষ অপরাধীর সঙ্গে সবচেয়ে বড় একটি গণতান্ত্রিক দেশের নেতা আলিঙ্গন করছেন, যা একদিকে যেমন হতাশাজনক তেমনি শান্তি প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে বড় ধাক্কা।

পশ্চিমা দেশগুলো বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা অবস্থায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এ সফর নিয়ে অন্যান্য দেশেও বেশ আলোচনা হচ্ছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণের পর, এই প্রথম ২২তম ভারত-রাশিয়া বার্ষিক সম্মেলনের অংশ হিসেবে রাশিয়ায় সফর করছেন মোদী।

সাম্প্রতিক সময়ে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলেছে পশ্চিমা দেশগুলো। চির শত্রু মস্কোর কাছ থেকে ভারতকে দূরে থাকতে চাপও দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিধর দেশগুলো।

এছাড়া ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর থেকে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে মস্কোর সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটেছে। পশ্চিমা অনেক দেশই মস্কোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে। তবে ভারত সরাসরি কখনোই রাশিয়া বিরোধী কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এছাড়া মোদীর এই সফরের অন্যতম আলোচ্য বিষয় হিসেবে গুরুত্ব পেয়েছে রুশ সেনাবাহিনীর হয়ে ভারতীয় তরুণদের যুদ্ধ করার ইস্যুটি।

গত কয়েক মাসে বহু দেশ থেকেই তরুণদের নিজেদের সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দিয়েছে রাশিয়া। এর মধ্যে প্রচুর ভারতীয়ও আছেন। তাদের অনেককেই কাজ পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখানে সেনাবাহিনী নিয়োগ দিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে বেশ কয়েকজন ভারতীয়র মৃত্যুও হয়েছে।

অনেক ভারতীয় নাগরিক সেখানে আটকা পড়ে আছেন। তবে এবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এরপরেই রুশ সেনাবাহিনীতে থাকা ভারতীয়দের দেশে ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্রেমলিন।