ব্রেকিং:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
  • রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

  • || ০৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

সর্বশেষ:
রমজানে সিলেটসহ সারাদেশে নতুন সময়সূচিতে চলছে অফিস সিলেটে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের আত্মহত্যা যুবকের! পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা, ইবাদত ও ফজিলত রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় জৈন্তাপুরে বাজার মনিটরিং চুনারুঘাটে দুর্ঘটনায় চাশ্রমিক-সন্তান নিহত অস্ত্রোপচারে দুর্ঘটনার দায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের: স্বাস্থমন্ত্রী হাইতির প্রধানমন্ত্রী হেনরির পদত্যাগ গত ১৫ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে : এম এ মান্নান এমপি বিএসএমএমইউ’র নতুন উপাচার্য ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক রমজানের প্রথম তারাবিতে সিলেটে মুসল্লিদের ঢল রমজানে আবহাওয়া যেমন থাকবে সিলেটে?
২৫৮

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা : সুযোগ, সুবিধা এবং হুমকি

সিলেট সমাচার

প্রকাশিত: ২ অক্টোবর ২০২৩  

বর্তমান বিশ্বের অর্থনীতিকে বলা হয় শিল্পভিত্তিক অর্থনীতি। আর শিল্পভিত্তিক এই বিশ্ব অর্থনীতির আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে প্রতিটি শিল্পবিপ্লবের সময়ে। বর্তমানে আমরা নতুন আরেকটি শিল্পবিল্পবের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি যাকে বলা হচ্ছে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব। আর প্রযুক্তিনির্ভর এই ডিজিটাল বিপ্লবের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) [Artificial intelligence (AI)]।

বিশ্বের যত সৃষ্টি আছে তার মধ্যে মানুষকে আলাদা করা যায় যে বৈশিষ্ট্যটির কল্যাণে, তা হলো তার বুদ্ধিমত্তা। এখন এই বুদ্ধিমত্তা বলতে আমরা কী বুঝি? প্রকৃতপক্ষে, বুদ্ধিমত্তা বলতে আমরা বুঝি কোনো নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ধারণা করতে পারা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারা, পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারা এবং তা কাজে লাগিয়ে নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করা ইত্যাদি গুণের একটি সামগ্রিক রূপ। যার মধ্যেই উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো দৃশ্যমান তাকেই আমরা বুদ্ধিমান হিসেবে আখ্যায়িত করতে পারি।

বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে যে বিষয়টি নিয়ে সর্বোচ্চ গবেষণা প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে তা হলো যন্ত্রকে কীভাবে বুদ্ধিমত্তা প্রদান করা যায়। আর কৃত্রিম উপায়ে যন্ত্রকে বুদ্ধিমান বানানোর এই প্রযুক্তিই হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। আভিধানিকভাবে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হলো মানুষের বুদ্ধিমত্তা ও চিন্তাশক্তিকে কৃত্রিম উপায়ে কম্পিউটার বা কম্পিউটার প্রযুক্তিনির্ভর কোনো যন্ত্রের মাধ্যমে বাস্তব রূপ দেওয়ার একটি ব্যবস্থা। এটি কম্পিউটার বিজ্ঞানের একটি অনন্য শাখা যেখানে মানুষের চিন্তাভাবনা ও বুদ্ধিমত্তাকে কম্পিউটার প্রোগ্রামের মাধ্যমে অনুকরণ ও নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার শুরু

সাম্প্রতিক সময়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন আলোড়ন সৃষ্টিকারী ‘ChatGPT’ অ্যাপ্লিকেশনটি চালু হওয়ার পর থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে তুমুল আলোচনা শুরু হলেও তা নিয়ে চর্চা কিন্তু শুরু হয়েছে আরও অনেক আগে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শব্দটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন কম্পিউটার বিজ্ঞানী জন ম্যাকার্থি (John McCarthy) ১৯৫৫ সালে। এজন্য তাকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জনক বলা হয়। তারও আগে ১৯৫০ সালে বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও গণিতবিদ অ্যালান টুরিং (Alan Turing) কোনো যন্ত্রের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যাচাই করার জন্য একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেন যা ‘টুরিং টেস্ট (Turing Test)’ নামে পরিচিত।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও যন্ত্র শিখন

মানুষের সাথে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন যন্ত্রের সবচেয়ে বড় পার্থক্য হচ্ছে কাজ করার ক্ষমতার মধ্যে। মানুষ যেখানে কিছুক্ষণ কাজ করলে অথবা একই রকম কাজ একটানা করলে ক্লান্ত হয়ে যায় সেই জায়গায় একটি যন্ত্রের কোনো বিরতির প্রয়োজন হয় না, তা ঘণ্টার পর ঘণ্টা একই কাজ নির্ভুলভাবে করে যেতে পারে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি মূলত তার কাছে সংরক্ষিত পূর্ববর্তী তথ্যকে বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন সেবা প্রদান করে থাকে। এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন অ্যালগোরিদম ও যন্ত্র শিখন পদ্ধতির মাধ্যমে বিশাল তথ্য ভাণ্ডার বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন ফলাফল ও অনুমান জানিয়ে থাকে। এই ক্ষেত্রে, একটি উল্লেখযোগ্য পদ্ধতি হচ্ছে আর্টিফিশিয়াল নিউরাল নেটওয়ার্ক [Artificial Neural Network (ANN)] যা মানুষের শরীরের নিউরনের কার্যপ্রণালী অনুকরণ করে বিদ্যমান ডাটাকে প্রসেস করে জ্ঞানভিত্তিক কম্পিউটেশন মডেল তৈরি করে।

তারপর সেই মডেল বিভিন্ন অজানা ডাটার ওপর প্রয়োগ করা হয়। প্রকৃতপক্ষে, নিউরাল নেটওয়ার্ক (Neural Network), যন্ত্র শিখন (Machine Learning), গভীর শিখন (Deep Learning), কম্পিউটার ভিশন (Computer Vision), স্বাভাবিক ভাষা প্রক্রিয়াকরণ (Natural Language Processing), জ্ঞানভিত্তিক পরিগণনা (Cognitive Computing) প্রভৃতি পদ্ধতি সম্মিলিতভাবে একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন যন্ত্র তৈরি করে থাকে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মূল লক্ষ হচ্ছে প্রযুক্তির মাধ্যমে কম্পিউটার বা যন্ত্রসমূহকে বুদ্ধিভিত্তিক সিদ্ধান্তগ্রহণে পারদর্শী করে তোলা যাতে তারা মানুষের দ্বারা সম্পন্ন কাজগুলো সুচারুরূপে সম্পন্ন করতে পারে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তিগত ব্যবহার নিয়ে আলোচনা সাম্প্রতিক হলেও তার প্রয়োগ কিন্তু শুরু হয়েছে আরও অনেক আগে এবং তার ব্যবহারের ক্ষেত্রও সর্বব্যাপী।

প্রকৃতপক্ষে মানুষ যেসব কাজ করে সেইসব কাজ সমূহ তো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তির মাধ্যমে করা হচ্ছেই, পরন্তু, যেসব কাজ মানুষের দ্বারা করা কষ্টকর বা অসম্ভব, সেইসব কার্যসমূহ কিন্তু প্রযুক্তি নির্ভর যন্ত্র সমূহ অনায়াসেই করছে।

সাম্প্রতিক সময়ে ভারত কর্তৃক চাঁদে প্রেরিত চন্দ্রযান-৩ এর কথায় বিবেচনা করা যাক। সেইখানে প্রেরিত তথ্য সংগ্রহকারী বস্তুটি প্রকৃত পক্ষে একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন রোবট। অপরদিকে চলমান রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে শত্রুপক্ষকে প্রতিহত করতে ব্যবহৃত হচ্ছে অত্যাধুনিক ড্রোনসমূহ যেগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করে শত্রুপক্ষের সীমানায় নির্ভুলভাবে আঘাত আনছে।

বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞানে এমন সব জটিল শল্য চিকিৎসা করা হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন রোবট দ্বারা যা মানুষের পক্ষে করা অসম্ভব। বড় বড় কল কারখানাগুলোয় বিভিন্ন পণ্য সমূহকে আনা নেওয়ার কাজে মানুষের পরিবর্তে ব্যবহৃত হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন যন্ত্র।

আধুনিক রেস্টুরেন্টগুলোয় খাবার অর্ডার নেওয়া থেকে শুরু করে ডেলিভারি পর্যন্ত সব কাজই করা হচ্ছে যন্ত্রের মাধ্যমে। এমনকি কৃষিক্ষেত্রেও এমন সব প্রযুক্তি নির্ভর যন্ত্রপাতির আগমন ঘটেছে যা বীজ বপন থেকে শুরু করে ফসল কাটা পর্যন্ত সব কাজ করে দিতে পারে কোনো মানুষের সাহায্য ছাড়াই। প্রকৃতপক্ষে, বর্তমানে, শিক্ষা থেকে ব্যবসা এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ নেই। 
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে চাকরি

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির ক্রমাগত বিকাশের ফলে বর্তমানে যে বিষয়টি সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে তা হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে কি বেকারত্বের পরিমাণ বেড়ে যাবে? সাম্প্রতিক কিছু পরিসংখ্যান এইক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য, যেমন—অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের মতে, আগামী ১২০ বছরের মধ্যে মানুষ তাদের দৈনন্দিন সব কাজ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন যন্ত্রের মাধ্যমেই সম্পন্ন করতে পারবে।

জাপান, বাংলাদেশ, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংবাদমাধ্যমগুলো সংবাদ উপস্থাপনের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রোবটের প্রয়োগ ঘটিয়েছে যা বেশ জনপ্রিয়তাও পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নামকরা পত্রিকা ফরচুনের তথ্যমতে, বর্তমানে বিশ্বের প্রায় পাঁচ শতাধিক নামকরা প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আশ্রয় নিচ্ছে।

ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের সাম্প্রতিক একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী আগামী পাঁচ বছরে বিশ্বের শ্রম বাজার থেকে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ চাকরি হারিয়ে যাবে। উপরোক্ত, তথ্য বা পরিসংখ্যানগুলো ভীতি জাগানিয়া হলেও প্রকৃত সত্য হচ্ছে চাকরি যেভাবে হারিয়ে যাবে একইভাবে নতুন নতুন চাকরির দ্বারও উন্মোচিত হবে।

প্রকৃতপক্ষে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে সেইসব চাকরিগুলোই ঝুঁকির মধ্যে পড়তে যাচ্ছে যেখানে কায়িক শ্রমের প্রয়োজন বেশি হয়, চিন্তাশক্তি কিংবা বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজন কম হয়। উদাহরণস্বরূপ—বিভিন্ন ধরনের ডাটা এন্ট্রি জব, কল সেন্টার জব, স্ক্রিপ্ট রাইটিং, কনটেন্ট রাইটিং, হিসাবরক্ষণ ইত্যাদি এবং দৈহিক শ্রমের কাজগুলো যেমন—কৃষিকাজ, পণ্য পরিবহন ইত্যাদি।

বর্তমানে এইসব চাকরির জায়গাগুলোই ধীরে ধীরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন যন্ত্রদ্বারা প্রতিস্থাপিত হচ্ছে। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, এইসব প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির সাথে সাথে কিন্তু নতুন নতুন চাকরিরও উদ্ভব হয়েছে যদিও সেইগুলো সবই হচ্ছে প্রযুক্তিনির্ভর।

আগামী দিনগুলোয়, আমার যেসব চাকরির ক্ষেত্রে মানুষের প্রাধান্য দেখতে পাবো তাহলো কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা বিশেষজ্ঞ, তথ্য-নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ, তথ্য বিশ্লেষক, বিগ ডাটা বিশেষজ্ঞ, বাণিজ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ইত্যাদি। অর্থাৎ ধীরে ধীরে আমাদের কায়িক শ্রমের বাজারটি ক্রমাগতভাবে সংকুচিত হবে এবং প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন, সৃজনশীল ও সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা সম্পন্ন মানুষের জন্য নতুন নতুন চাকরির দ্বার উন্মোচিত হবে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার হুমকি

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্রমাগত উন্নতির ফলে চাকরির বাজার সংকোচনের পাশাপাশি বর্তমানে যে বিষয়টি নিয়ে সবাই চিন্তিত তা হলো মানুষ দ্বারা সৃষ্ট এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যন্ত্রগুলো কি ভবিষ্যতে মানব সভ্যতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে?

নিউটনের তৃতীয় সূত্র অনুযায়ী প্রত্যেকটি ক্রিয়ারই একটি সমান বা বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। ঠিক তেমনি, যেকোনো কাজেরই ভালো ও খারাপ দুটি দিকই থাকে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির ক্রমাগত উন্নতির ফলে, আমরা মানুষের মতো চিন্তাভাবনা সম্পন্ন, পরিবেশের ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম যন্ত্র কিন্তু বিভিন্ন আঙ্গিকে তৈরি করে ফেলেছি।

বর্তমানে যে জিনিসটি নিয়ে কাজ হচ্ছে তা হলো যন্ত্রকে কীভাবে মানুষের মতো আবেগ অনুভূতি প্রবণ করা যায়। আর এই বৈশিষ্ট্যগুলো অর্জিত হলে প্রকৃতপক্ষেই তারা নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরাই নিতে সক্ষম হবে। ফলে মানুষের ওপর তাদের নির্ভরতাও শেষ হয়ে যাবে। আর এই ধরনের একটি যন্ত্র ভুল নির্দেশনা পেলে তা একজন আবেগ অনুভূতিহীন বুদ্ধিমান মানুষ যতটা ভয়ংকর হতে পারে, তার চেয়েও বেশি ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে, যাদের ওপর মানুষের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না।

এই কারণে বিভিন্ন বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদরা এই ক্ষতিকর প্রভাব বিবেচনা করে এর ব্যবহার সীমিত করার ব্যাপারে অভিমত প্রকাশ করেছেন। বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং (Stephen Hawking) কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহারগুলো সম্পর্কে সতর্ক করে বলেছেন, এটি মানব সভ্যতার বিলুপ্তি ঘটাতে পারে।

গুগলের প্রধান নির্বাহী সুন্দর পিচাই (Sundar Pichai)ও মনে করেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহারগুলো সম্পর্কে আমাদের এখনই ভাবতে হবে এবং তার অপব্যবহার রুখতে প্রয়োজনীয় নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও এক্স এর প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক (Elon Musk)-এর মতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই উন্নয়ন কোনো দৈত্যকে ডেকে আনার মতো।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভবিষ্যৎ

জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্রমাগত উন্নতির সাথে সাথে মানুষ গৎবাঁধা কায়িক শ্রমের কাজগুলো থেকে বেরিয়ে আসছে এবং এইসব কাজগুলো বিভিন্ন প্রযুক্তি যন্ত্রের মাধ্যমে করিয়ে নেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত আছে। সামনের দিনগুলোয় যন্ত্রের এই প্রযুক্তিগত উন্নয়ন আরও বেগবান হবে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই অব্যাহত উন্নয়ন এক সময় মানুষের সক্ষমতাকে ও ছাপিয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ChatGPT-সহ এই ধরনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন প্রযুক্তির ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। আবার অনেক দেশ নির্দিষ্ট নীতিমালার আলোকে এইসব প্রযুক্তি পণ্যকে ব্যবহারের জন্য অনুমতি প্রদান করেছে।

এইক্ষেত্রে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে যে, অনেক বেশি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টাও বিপরীত ফল বয়ে আনতে পারে। কেননা আমরা দেখেছি, ক্রিপ্টোকারেন্সি (Cryptocurrency)-কে প্রচলিত লেনদেন ব্যবস্থায় যুক্ত না করার কারণে তা কিন্তু বন্ধ হয়ে যায়নি বরং তা ইন্টারনেট ভিত্তিক অপরাধ কর্মকাণ্ডে একটি আর্থিক মুদ্রা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আমাদের জন্য ক্ষতিকারক না উপকারী তা হয়তো ভবিষ্যৎ ঠিক করে দেবে। তা যে আমাদের ওপরও অনেকখানি নির্ভর করবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না কারণ খনি খননের জন্য উদ্ভাবিত ডিনামাইটও কিন্তু যুদ্ধের ময়দানে ব্যবহৃত হয়েছে মানুষকে মারার জন্য, যুদ্ধ জয়ের জন্য।

সুতরাং অনেক ভালো প্রযুক্তিও খারাপ হয়ে যেতে পারে যদি তা খারাপ উদ্দেশ্যে দুষ্ট লোকের দ্বারা পরিচালিত হয়। আর সেই রকম কোনো কিছু যদি ঘটে, তাহলে আমাদেরও হলিউড, বলিউডের সিনেমার মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবটের সাথে যুদ্ধ করে টিকে থাকার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

সেই রকম কিছু যদি নাও ঘটে নিজেদের আগামীর প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলেও প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জনে মনোযোগী হতে হবে। কেননা প্রকৃত অর্থেই আগামীর বিশ্ব হবে শুধুমাত্র যোগ্যদের বেঁচে থাকার জায়গা।

ড. সজীব সাহা ।। সহযোগী অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সিলেট সমাচার
সিলেট সমাচার